ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সিংহ শাবক

রাসেল টুম্পার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের ভাইবোন সিংহ শাবক রাসেল-টুম্পা গ্যাস্ট্রলোজিকেল রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এই অবস্থায় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ সিংহ শাবকের চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যদের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ড পার্কের ভেটেরিনারি হাসপাতালে সিংহ শাবকগুলোর চিকিৎসা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো মাজহারুল ইসলাম। সাফারি পার্ক সুত্রে জনা গেছে, সিংহ শাবক রাসেল (১৬) ও টুম্পা (১৫)। বয়সে এক বছরের বড়-ছোট। মা হীরাকে হারিয়েছেন অল্প বয়সে। মাকে হারানোর পর থেকে বাবা সোহেলের সঙ্গে ভালোভাবেই দিন অতিবাহিত করছিলো। তবে, এরমধ্যে পার্কে থাকা অপর সিংহ নদী নামে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় সোহেল। দীর্ঘদিন সোহেল ও নদী একসঙ্গে সুখে জীবনযাপন করলেও গত বছর তিন মাসের ব্যবধানে বার্ধক্যজনিত কারণে সোহেল ও নদী মারা যায়। বাবা-মাকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করছিল রাসেল ও টুম্পা।
কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে তারা দুই ভাই-বোন রাসেল ও টুম্পা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। এরমধ্যে তাদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। তারপরও সুস্থ হয়ে উঠেনি। এতক্ষণ যাদের কথা বলছিলাম তারা কোনো মানবজাতি না। তারা কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সিংহ সোহেল ও সিংহী টুম্পা।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, অসুস্থ সিংহ রাসেল ২০০৭ সালের ১৫ অক্টোবর ও এক সিংহী টুম্পা ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে সিংহ রাসেলের ১৬ বছর এবং সিংহী টুম্পা ১৫ বছর বয়স অতিক্রম করছে। সিংহরা মূলত ১৬ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বর্তমানে রাসেলের বয়স ১৬ ও টুম্পার বয়স ১৫ অতিক্রম করেছে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( রেঞ্জ অফিসার) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পার্কে ৫টি সিংহ রয়েছে। তাদের মধ্যে ২টি সিংহ ও ৩টি সিংহী। গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পা খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। বাত, ব্যথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান অবশ হয়ে যাচ্ছে। দাঁতে ক্ষয়, ঘন ঘন প্রস্রাব শুরু করে।

এরপর থেকে দুই ভাই-বোনকে বেষ্টনিতে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন সাফারি পার্কের ভেটেরেনারি সার্জন ডা. হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন। মাঝখানে তারা কিছুটা সুস্থ হলেও পরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের অধিকতর চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১৪ জানুয়ারি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করেন।

এই মেডিকেল টিমের প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সাইসেন্স বিশ্ববিদ্যালয়েল মেডিসিন ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ ড. বিবেক চন্দ্র সুত্রধর।

আর চার সদস্য হলেন- একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ভজন চন্দ্র দাস, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অব. পরিচালক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন, চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন। ইতোমধ্যে মেডিকেল টিমের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যের টিম কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এসে রাসেল ও টুম্পার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছেন।

মেডিকেল টিমের বরাত দিয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসেল ও টুম্পার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, মানুষ আর প্রাণীর রোগ অনেকটা একই ধরনের। মানুষের স্বাভাবিক যে রোগগুলো হয়, প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একই রকম হতে পারে।

তিনি বলেন, চিকিৎসকদের মতে সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পা গ্যাস্ট্রলোজিকেল সমস্যায় ভুগছে। সেজন্য তারা খাবার খেতে চাইছে না। আশা করি তারা শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে। আবারও ঘুরাফেরা করবে পার্কের বেষ্টনীতে। ##

পাঠকের মতামত: